Thursday, June 15, 2017

মহাজোট সরকারের ধর্মবিরোধী কার্যক্রম একটি পর্যালোচনা

পাভেল সারওয়ার
গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হয় মহাজোট সরকার। মহাজোট সরকারকে ১/১১ এর ফসলও বলা চলে। মহাজোট সরকার নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, সে আলোকে তারা ধর্মীয় সভা-সমাবেশে পুলিশি হামলা, মিথ্যা অজুহাতে ধর্মীয় নেতাদের আটক, ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাধা প্রদান, তাফসির মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা, ধর্মীয় সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারিসহ নানা ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বে যারা ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে নিজেদের দাবি করে এমন রাষ্ট্রগুলোকে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের মত আচরণ করতে দেখা যায় না। বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে ইসলাম অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) ও আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করেছে। মহাজোট সরকারের ধর্মবিরোধী কার্যক্রমের খুচরাংশ তুলে ধরা হলো।
পর্দাবিরোধী কার্যক্রম
২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী তনয় জয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিনে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বোরকার ব্যবহার ৪০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই পর্দাবিরোধী কার্যক্রম শুরু করেছে জয়ের পৈতৃক স্থান রংপুর থেকে। ১লা মার্চ ২০১০ এ রংপুর পুলিশ প্রশাসন বোরকা না পরার অপরাধে ২৯ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালত এ মর্মে রায় দেন যে, ‘কোন মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না।’ জয়ের উদ্বেগ ও বোরকা নিষিদ্ধ- একই সূত্রে গাঁথা নয় কি?
পর্দার বিষয়ে পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বিধান হলো “হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও বিশ্বাসী নারীদের বলে দাও, তারা যেন চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের (ভদ্র ও মার্জিত হিসেবে) চেনা সহজ হবে, কেউ তাদের উত্ত্যক্ত (ইভটিজিং) করবে না।” (সূরা আহজাব : ৫৯)।
আল্লাহ যেখানে পর্দার বিধান জারি করেছেন সেখানে আওয়ামী সরকার এটিকে ঐচ্ছিক করে রায় দিয়ে আল্লাহদ্রোহিতার পরিচয় দিয়েছে।
ফতোয়া প্রদান নিষিদ্ধ করা
মহাজোট সরকার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে মুফতিদের ফতোয়া প্রদান নিষিদ্ধ করতে চায়। অথচ মানবজীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান তুলে ধরাই হলো ফতোয়া। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘‘লোকেরা আপনার কাছে নারীদের প্রসঙ্গে ফতোয়া চায়। আপনি বলুন, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদের ফতোয়া দিচ্ছেন এবং সে বিষয়েও যা কিতাবে তোমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।’’ (সূরা নিসা : ১২৭)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘‘লোকেরা আপনার (রাসূল সা) নিকট ফতোয়া জানতে চায়, আপনি বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদের ফতোয়া দিচ্ছেন।’’ (সূরা নিসা : ১৭৬)
কিন্তু মহাজোট সরকার কুরআন- সুন্নাহবিরোধী আইন করবে না ঘোষণা দিয়েও ফতোয়া নিষিদ্ধের মাধ্যমে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।
ইসলামবিরোধী নারীনীতি
বর্তমান আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার নিজেদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ‘জাতীয় নারীনীতি ২০১১’ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় নারীনীতি-২০১১ এর বিতর্কিত কয়েকটি ধারা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করা হলো :
ধারা ১৭.২ : নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (ঈঊউঅড) এর প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ধারা ২৫.২ উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা।
ধারা ১৮.৪ : কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ দূরীকরণ এবং পরিবারসহ সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা।
ধারা ২৩.৫ : সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া।
ধারা ৩৫.২ : একক নারী, নারী প্রধান পরিবার, শ্রমজীবী ও পেশাজীবী নারী, শিক্ষানবিস ও প্রশিক্ষণার্থী নারীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ গৃহ ও আবাসন সুবিধা প্রদানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা।
৪৯টি ধারা ও অসংখ্য উপধারায় বিভক্ত এই নারীনীতি মুসলিম বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে, দেশের হাক্কানি আলেমসমাজ ও সচেতন নাগরিকরা এ নীতিকে ইসলামবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে নারীনীতিকে জাতির ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার ইসলামের পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ আইন বাস্তবায়িত হলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এবং আমাদের শান্তিময় পরিবার প্রথা ভেঙে যাবে। নারীরা পাশ্চাত্যের উলঙ্গ নারীদের মতো পরিবারবিহীন জীবন যাপনে বাধ্য হবে। মহান আল্লাহ যে আইন দিয়েছেন তাকে পরিবর্তনের অধিকার বর্তমান সরকারের নিশ্চয়ই নেই। মহাজোট সরকার ঘোষিত নারী নীতিমালায় নারী- পুরুষকে সকল ক্ষেত্রে সমতা দেয়ার লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছে, যা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। যথা-
ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (উত্তরাধিকার প্রাপ্তির) ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, ‘পুত্রসন্তান পাবে দুই কন্যাসন্তানের সমান, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান, আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আন নিসা : ১১)
রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘পুরুষ আপন পরিবার-পরিজনের ওপর দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন অধীনস্থদের ব্যাপারে, নারী দায়িত্বশীল তার স্বামীর সংসারের। সে জিজ্ঞাসিত হবে আপন দায়িত্বাধীন বিষয়ে।’ (বুখারী ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৫৭। মুসলিম ২য় খণ্ড, পৃ. ১২২) (হাদিসটি সংক্ষেপিত)
ধর্মহীন শিক্ষানীতি
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী নাস্তিক্যবাদী সরকার ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে ধর্মীয় মূল্যবোধের আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে ধর্মবিবর্জিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। ধর্মকে ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত করে সরকার ধর্ম বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছে। এ ছাড়া সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে বিকৃত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আওয়ামী শিক্ষক ও চেম্বার জজের যোগসাজশে এ সরকারের আমলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বঞ্চিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পড় (হে নবী) তোমার রবের নামে! যিনি জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন,? পড় এবং তোমার রব বড় মেহেরবান, যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন!’’ (সূরা আলাক : ১-৫)
অন্যান্য অপকর্ম
এ সরকারের আমলে বিকৃত মস্তিষ্কের দেব নারায়ণ নামে একজন শিক্ষক পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে, কুরবানির বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে হাইকোর্টে রিট করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় তার সেই রিট আদালত আমলে নিয়ে যাচাই বাছাইও করেছে। যেখানে বর্তমান সরকারের মডেল ভারতের মতো উগ্র হিন্দুবাদী রাষ্ট্রের আদালত এ রকম একটি রিট সরাসরি খারিজ করে দেয়।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। এটি হিদায়াত সেই মুত্তাকিদের জন্য।’ (সূরা বাকারা -২)
এ সরকার হিন্দু সংস্কৃতির মঙ্গল প্রদীপ, প্রতিকৃতি পূজা, মূর্তি স্থাপন কার্যক্রমকে দলীয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে ভারতীয় শিল্পীদের উলঙ্গ নাচ গানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে বাধা দিচ্ছে প্রতিনিয়তই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘‘যারা বিশ্বাসীদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য ইহকাল এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।’’
আল্লাহদ্রোহিতা করে ফেরাউন, নমরুদ, শাদ্দাদ কেউই টিকে থাকতে পারেনি, বর্তমান মহাজোট সরকারও পারবে না। মহাজোট সরকারের প্রতি পরামর্শ – কুরআন না পড়ে, না বুঝে ঢালাওভাবে সিদ্ধান্ত নিলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। আদ ও সামুদ জাতির মতো আপনাদের কপালে আল্লাহর আজাব ডেকে আনবেন না।
আর এখনই সময় সকল মুসলমানকে এক হয়ে ইসলামবিরোধী অপশক্তি রুখে দাঁড়ানোর। আল্লাহ বাংলাদেশকে আগ্রাসনবাদী শকুনের হাত থেকে রক্ষা করুন।
লেখক : প্রধান পরিচালক
নিমন্ত্রণ সাংস্কৃতিক সংসদ
Source: http://www.chhatrasangbadbd.com/ Date: July, 2011

No comments:

Post a Comment

Popular Posts