Showing posts with label আল-কোরআন. Show all posts
Showing posts with label আল-কোরআন. Show all posts

Friday, April 6, 2018

সময়ের কসম, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত -মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত


মহাগ্রন্থ আল কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা হচ্ছে আল আসর। এই সূরাটির আয়াত তিনটি। এটি কুরআনের ছোট সূরাগুলোর অন্যতম। এই সূরাটি ছোট হলেও এর তাৎপর্য ব্যাপকতর। লেখার শিরোনামটি এই সূরারই প্রথম অংশের অর্থ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এই সূরাতে সময়ের শপথ নিয়ে মানুষ যে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত তা তুলে ধরেছেন, তার পাশাপাশি কারা ক্ষতির কবল থেকে মুক্ত থাকবে সে কথাও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। সূরাটির পুরো অর্থ নিম্নে তুলে ধরা হলো- সময়ের কসম। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথা ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে। (আল কুরআন : সূরা আসর)

ছোট্ট এই মাক্কি সূরাটিতে মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাষায়, মানুষের সাফল্য-ব্যর্থতা, কল্যাণ-অকল্যাণ এবং ধ্বংসের পথ বর্ণনা করেছেন। মানুষের জীবনের প্রতিটি সময়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগিয়ে জীবনটাকে বদলে দেয়ার জন্য এই সূরার অনুসরণই যথেষ্ট। এই সূরার তাৎপর্য উপলব্ধি করে কাজ করতে পারলে সাফল্য অনিবার্য। ইমাম শাফেয়ি (রহ:) বলেন, মানুষ যদি এই একটি সূরা অর্থাৎ সূরা আসর নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে এটিই তাদের হেদায়েত তথা সফলতার জন্য যথেষ্ট। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ওবাইদুল্লাহ বিন হিসন (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সাহাবিদের মধ্য থেকে যখন দুই ব্যক্তি মিলিত হতেন তখন তারা একজন অপরজনকে সূরা আসর না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না।’ (তাবারানি)
মহান আল্লাহর এখানে সময়ের কসম করার যথার্থ যুক্তি আছে। আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোনো বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব, অভিনবত্ব প্রকাশের জন্য কখনও কসম বা শপথ করেননি বরং যে বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন তার ক্ষেত্রেই তিনি সত্যতা প্রমাণ করতেই কসম খেয়েছেন। সময় অতি মূল্যবান একটি বিষয়। সময় বলতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে বোঝায়। এটি কোনো দীর্ঘ সময়ের অর্থে নয়। ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা বর্তমান অতীতে নিপতিত সময়কে বোঝানো হয়েছে। অতীতের কসম হলো ইতিহাসের সাক্ষ্য। বর্তমানের কসম হলো বর্তমানের অতিবাহিত সময়। মানুষকে কাজের জন্য সময় দেয়া হচ্ছে। সময় এক ধরনের মূলধন। মূলধন নামক মানুষের এই সময় দ্রুতই অতিবাহিত হচ্ছে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে ইমাম রাযি (রহ:) একজন মনীষীর উক্তি উল্লেখ করে বলেছেন- তাহলো, একজন বরফ বিক্রেতার কথা থেকেই আমি সূরা আল আসরের অর্থ বুঝতে পেরেছি যে বাজারে জোর গলায় চিৎকার করে বলছিল, দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুঁজি (বরফ) গলে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে আমি বললাম, এইটিই হচ্ছে আসলে ‘নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত’ বাক্যের প্রকৃত অর্থ।
মানুষকে যে সময় (আয়ুষ্কাল) দেয়া হয়েছে তা বরফ গলে যাওয়ার মতো দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। একে যদি নষ্ট করে দেয়া হয় অথবা ভুল কাজে ব্যয় করা হয় তাহলে সেটিই মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি। কাজেই চলমান সময়ের কসম খেয়ে এই সূরায় যা বলা হয়েছে তার অর্থ এই যে, এই দ্রুত গতিশীল সময় সাক্ষ্য দিচ্ছে, সূরা আসরে বর্ণিত চারটি গুণাবলিশূন্য হয়ে যে মানুষ যে কাজেই নিজের জীবনকাল অতিবাহিত করে- তার সবটুকুই ক্ষতির সওদা ছাড়া কিছুই নয়। পরীক্ষার হলে যে ছাত্র প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়ার পরিবর্তে অন্য কাজে সময় নষ্ট করেছে, তাকে পরীক্ষার হলে টাঙানো ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে তুমি নিজের ক্ষতি করছো। যে ছাত্র এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের প্রশ্নপত্রের জবাব দেয়ার কাজে ব্যয় করেছে একমাত্র সে-ই লাভবান হচ্ছে। আর রেজাল্টের দিন সেই ছেলেটিই সফলতা অর্জন করবে।

এ সূরায় চারটি গুণাবলির অধিকারী ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যারা সময়ের বহমান ¯্রােতে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে : ১. যারা ঈমান এনেছে ২. যারা সৎকাজ করতে থেকেছে ৩. যারা পরস্পরকে হকের উপদেশ দিতে থেকেছে এবং ৪. যারা পরস্পরকে সবর বা ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে থেকেছে। প্রথম কাজ হলো ঈমান আনা। শুধুমাত্র মুখে স্বীকার করলেই তাকে ঈমান আনা বলা হয় না বা ঈমানের দাবি পূরণ হয় না। বরং ঈমানের তিনটি ধাপ রয়েছে। তা হলো অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা, তারপর মুখে স্বীকৃতি তথা বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ করা, তৃতীয়ত বাস্তবে কাজে পরিণত করা। আল্লাহ বলেন, আসলে তারাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও রাসূল (সা:)-এর প্রতি ঈমান এনেছে এরপর কোনরূপ সন্দেহে পতিত হয়নি। (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১৫)

দ্বিতীয়ত, ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে তারা যারা আমলে সালেহ তথা সৎকাজ করতে থেকেছে। কুরআনের পরিভাষায় সালেহাত সমস্ত সৎকাজ এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের দৃষ্টিতে, যে কাজের মূলে ঈমান আছে এবং যা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) প্রদত্ত হেদায়েতের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে তা সৎকাজ। ঈমানের পর সৎকাজের বর্ণনার অর্থ হলো ঈমানবিহীন কোনো সৎকাজের পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ নেই। সৎকাজবিহীন ঈমান একটি দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈমান ও সৎকাজ বীজ আর বৃক্ষের মতো। আল্লাহ এবং বান্দার হক আদায়, মা-বাবার খেদমত করা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীর হক আদায় করা, অপরকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকাও গুরুত্বপূর্ণ সৎকাজ।
ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার পরবর্তী দু’টি গুণ হলো- যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা পরস্পরকে হক কথা বলা, হক কাজ করা এবং ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে হবে। এর প্রাথমিক অর্থ হচ্ছে ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের পৃথক না থেকে সম্মিলিতভাবে একটি সৎ সমাজ গড়ে তুলতে হবে। যেখানে নিজে হকের ওপর অবিচল থাকার পাশাপাশি অন্যকেও এ পথে আহ্বান করতে হবে। মনে রাখতে হবে সমাজে একা একা ভালো থাকা যায় না। কেউ যদি মনে করেন তিনি ভালো থাকবেন ঘরে কিংবা মসজিদের কোণে বসে তার পক্ষে তা সম্ভব হবে না। কারণ সমাজের ক্ষতির প্রভাব তার ওপরও কোনো না কোনো ভাবে পড়বে। ফলে একা একা হকের পথে থেকেও তিনি আসলেই ভালো থাকতে পারবেন না। সবাইকে ভালো পথে হকের পথে সত্যের পথে নিয়ে আসার মাধ্যমেই ভালো থাকা সম্ভব।
চতুর্থ গুণটি হলো সবর বা ধৈর্য। হকের নসিহত করতে গিয়ে বা হকের সমর্থন করতে গিয়ে যে সব সমস্যা ও বাধার মুখে নিপতিত হতে হয় তার মোকাবেলায় তারা পরস্পরকে অবিচল ও দৃঢ় থাকার উপদেশ দিতে থাকবে। হক এবং বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। যেখানেই হক সেখানেই বাতিল আঘাত হানার চেষ্টা করে। হক তথা সত্য পথে থেকে সফলতা অর্জন করতে গেলে বাধা-বিপত্তি আসবেই। ধৈর্যের সাথে তার মোকাবেলা করতে হবে। আর ধৈর্যশীলদের জন্যই আল্লাহর পুরস্কার নির্ধারিত।

লেখক : এমফিল গবেষক

Monday, March 12, 2018

ঐতিহাসিক ১১ মে কোরআন দিবস: কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় মাইলস্টোন এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

১১ মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস। প্রতিবছর ১১ মে এটি কুরআন দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। ১৯৮৫ সালের ১১ মে কুরআনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে সংঘটিত হয় এক পৈশাচিক, নারকীয় হত্যাকান্ড। ১৯৮৫ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আটজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য সেই থেকে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। ঘটনার সূত্রপাত ভারতে ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। এদিন ভারতের দুইজন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল সিং কোরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করে। রীটে বলা হয়, কুরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেখানে কাফির ও মুশরিকদের হত্যা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেরণা দেয়া হয়েছে, তারা কুরআনে উল্লেখিত সূরা বাকারার ১৯১নং আয়াত ও সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা দায়ের করেছিল। কোরআন যেহেতু কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাদের হত্যা করার কথা বলেছে সেহেতু কুরআন একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানী দাতা গ্রন্থ এবং এই গ্রন্থ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে। তাই একে বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে মামলা দায়ের করে। ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সি আর পিসি ১১৫(ক) ও ২৯৫ (ক) উদ্ধৃতি দিয়ে তারা আল কোরআনকে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী বলে উল্লেখ করে। বিচারপতি মিসেস পদ্মা খাস্তগীর মামলা গ্রহণ করেন। তিনি ১২ই এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশ এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

কুরআনকে বাজেয়াপ্ত করার মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কলকাতাসহ সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। ১০ মে জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে হাজার হাজার ইসলামী ছাত্র-জনতার মিছিল ও সমাবেশে মিলিত হলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সারাদেশের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে আয়োজন করা হয় এক প্রতিবাদ সমাবেশ। ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। এদিন্ ইসলামী জনতা শুধুমাত্র দোয়া করার অনুমতি চাইলে তা না দিয়ে জনতার উপর গুলী বর্ষণ করে পুলিশ। এতে স্কুল ছাত্র, কৃষক, রিক্সাওয়ালা ও রেল শ্রমিকসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ জন শাহাদাত বরণ করেন। ঘটনার দিন বেলা ১১ টার সময় সমাবেশের আহবায়ক মাওলানা হোসাইন আহমদকে এসপি অফিসে ডেকে সমাবেশ বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়া হয়। কিন্তু ইসলামী জনতা দলে দলে আসতে থাকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে। উপায় না দেখে ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। শুধুমাত্র দোয়া করে জনতাকে শান্ত করে চলে যাবো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সেই আবেদনও শুনেনি ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা। এসময় ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা সেই সুযোগ দেয়া হবে না বলে গালিগালাজ করতে থাকে, ব্যাটা মৌলবাদীদের দেখে নেবো বলেও প্রকাশ্য হুমকি দেয়। এসময় ইসলামী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লে ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নির্দেশে এলোপাতাড়ি গুলী বর্ষণ শুরু করে পুলিশ। পুলিশের গুলীতে প্রথমেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র শিবির কর্মী আব্দুল মতিন। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় শীষ মোহাম্মদ, রশিদুল হক, ৮ম শ্রেণীর ছাত্র সেলিম, সাহাবুদ্দীন, কৃষক আলতাফুর রহমান সবুর, রিক্সা চালক মোক্তার হোসেন ও রেল শ্রমিক নজরুল ইসলাম শহীদ হন। আহত হয় অর্ধ শতাধিক মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই না থাকায় আহতদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়। ন্যক্কারজনকভাবে রাজশাহী নেয়ার পথেও আহতদের ওপর পুনরায় আক্রমণ চালানো হয়। বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে হয়রানি করা হয়। নতুন করে পুলিশি নির্যাতনের পাশাপাশি মামলা দায়ের করা হয়। কুরআনের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যেখানে সকল মুসলমানের কর্তব্য সেখানে ইসলামী জনতার উপর গুলী বর্ষণ করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচনা করেছিল বাংলাদেশের কিছু মুসলমান নামধারী পুলিশ। বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের নিদের্শদাতা ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। বর্বরোচিত এই হত্যাকান্ডের বিচারতো হয়ইনি, বরং উল্টো হয়রানি করা হয়েছিল মুসলিম জনতাকে।

ছবিঃ ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা

চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী পরদিন ১২ মে সকল বাধা উপেক্ষা করে কারফিউ ভেঙে জুমার নামাজের পর নৃশংস হত্যা বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে রাজপথে নেমে আসে । এ দিকে সারা বাংলাদেশে এমন নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমন ঘটনা সারা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৩ মে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুরআনপ্রেমিক মানুষ। 

বাংলাদেশের এ ঘটনার ফলে সারা বিশ্বে একটি জনমত সৃষ্টি হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে ভারত সরকার তটস্থ হয়ে হাইকোর্ট রায়টি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলে ১৩ ই মে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বি. সি বাসক বামনের আদালতে স্থানান্তরিত হয় এবং তিনি উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেন। সেই থেকেই বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ ১১ মে'র সেই দিনকে স্মরণ করে “কোরআন দিবস” হিসেবে পালন করে আসছে।

কুরআনের মর্যাদা রক্ষার সেই মহান সফল সংগ্রাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং সহযোগী ইসলামী ছাত্রশিবিরের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। আর এখনো প্রধাণতঃ এদের দ্বারাই এই দিবসটি কোরআন দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিবসটি দেশবাসীর কাছে আরো ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে এবং সেই শাহাদাতের তামান্না নিয়ে আল-কোরআনকে বিজয়ী বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন, আমিন। 

১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস ।কোরআনের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে  
১১ মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র 


১৯৮৫ সালের ১১ মে’র ঘটনা জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আল-কোরআনের মর্যাদা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের একটি অংশমাত্র। এরজন্য জামায়াতে ইসলামী নীচের কাজগুলোসহ আরো কাজ অব্যাহত রেখেছে:
১) আল-কোরআন বুঝে আয়ত্ব করা তথা অধ্যয়নের জন্য ব্যাপকভাবে কোরআনের তাফসীর গ্রন্থ প্রচার ও প্রচলনের ব্যবস্থা করেছে। এই তাফসীর গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে তাফহীমুল কোরআন, তাফসীর ফি জিলালিল কোরআন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে ওসমানী ইত্যাদি।
২) বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রথম তাফসীরুল কোরআন মাহফিল প্রচলন করে এবং দেশজুড়ে এর বিস্তার ঘটায়। অধিকন্তু এই তাফসীর মাহফিলের ভিডিও ক্যাসেট পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দেয়। পরে অন্যান্যরাও তাফসীর মাহফিল করে বর্তমানে। 
৩) বর্তমানে ফ্রী কোরআন শিক্ষার আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সক্রিয় জনশক্তি একাজে নিয়োজিত হয়েছে। একে জামায়াত নিজ জনশক্তির ব্যক্তিগত কাজের অংশ করে দিয়েছে। 
৪) রাছুল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আল-কোরআনকে বিজয়ী বিধান হিসাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী মরণপণ সংগ্রাম-আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। অন্য ইসলামী শক্তি গুলো মুখে রাছুল ও সাহাবায়ে কেরামের ভক্তি দেখালেও রাছুল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মূল কাজের বিষয়ে দুর্বল, কোন কোন সময় বিরোধীও। 

১১ মেতে আরেকটি স্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা: ১১ মে তারিখে ১৮৫৭ ঐতিহাসিক বৃটিশবিরোধী আজাদী আন্দোলনের সিপাহীরা দিল্লী অধিকার করেন এবং মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহকে সম্রাট ঘোষণা করেন।

Tuesday, March 14, 2017

দারসুল কোরআন সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই -অধ্যাপক মফিজুর রহমান


সূরা আন-নমল: আয়াত ৫০-৫২
.০১ ﴿ وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُوْنَ ০ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ ০ فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ﴾
02.Translation:
And they planned a plan, and we planned a plan, while they perceived not. Then see how was the end of their plan? verily we destroyed them and their nation all togather. Those are their houses desolate because they did wrong. Indeed in that is a sign for the people who know.   -27, Sura An-Naml:  50-52

০৩. অনুবাদ:
“তারাত নবী হত্যার পরিকল্পনা করল আর আমরাও তাদের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিলাম। তাদের পরিকল্পনা আমার জানা ছিল কিন্তু আমার পলিকল্পনা তারা অবগত ছিল না। এখন দেখে নাও তাদের ভয়াবহ চক্রান্তের কি নিদারূণ পরিণতি হয়েছিল। আমার কঠিন গজব কিভাবে ধ্বংস করেছিল তাদেরকে ও তাদের অভিশপ্ত জাতিকে, এতে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনুভব করার নিদর্শন।
-২৭, সূরা আন-নমল: ৫০-৫২
০৪. পটভূমি:
ক. নামকরণ:
আমরা জানি যে কোরআনুল কারিমের সূরা সমূহের নাম রাসূল (সঃ) ঠিক করেন নি। বরং আল্লাহ তায়ালাই নির্ধারণ করেছেন। কোরআন শরীফ প্রতি বর্ণও শব্দের ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া গায়রুল্লাহর কোন হাত নেই।
এ সূরার নাম আন- নামল অর্থাৎ ‘পিপীলিকা’ ‘‘The Ant’
এ সূরার ১৮ নং আয়াতে اَلنَّمَلْ এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আঃ) যাকে আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টির ভাষা বুঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি যখন তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে পিপিলিকার প্রান্তরে পৌছেন তখন একজন পিপিলিকা সর্দার সকলকে গর্তে প্রবেশের নির্দেশ দেন নতুবা তারা সোলায়মান বাহিনীর পদতলে পিষ্ঠ হয়ে যাবে। তার কথা শুনতে পেয়ে সুলায়মান (আঃ) হেসে উঠলেন ও আল্লাহর দেয়া এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করেন।
এ সূরায় তাইاَلنَّمَلْ  শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তাফসীরবিদগণ নামকরণের জন্যে ইহাই কারণ বলে মনে করেন। প্রকৃত জ্ঞানত আল্লাহ তায়ালার নিকট রয়েছে।
খ. নাযিলের সময়কাল:
প্রখ্যাত তাফসীরবিদ ইবনে আব্বাস (রাঃ) মনে করেন ইহা সূরা কাসাস এর আগে ও সূরা শুয়ারার কাছাকাছি সময় নাযিল হয়েছে।
এ সূরা মক্কি যুগের মাঝামাঝিতে অবতীর্ণ হয়েছে। ইহা মাক্কী সূরা। সে সময়টি ছিল অত্যাচার ও নির্যাতনের কঠিন সময়। ঈমানদারদের উপর যুলুম ও নিপড়নের পাহাড় ভেংগে পড়েছিল। সহযোগীতার হাত তাদের জন্যে প্রসারিত ছিল না, পৃথিবী ছিল তাদের জন্যে সংকীর্ন।
গ. আলোচ্য বিষয়:
এ সূরাটিতে ২টি ভাষণ রয়েছে
প্রথমটি ১ম রুকু থেকে ৪র্থ রুকু
এখানে কোরআনুল কারিমের সত্যতা, মুজেজা ও আখেরাতের অনিবার্যতা তুলে ধরা হয়েছে। আর আখেরাতের সফলতার কারণ নেক আমল। নাফরমানী বা বদ আমল পরকালীন জিন্দেগীর বিপর্যয়ের কারণ বলা হয়েছে। অবিশ্বাসীদের অনাচার সৃষ্টির পথ পরিহার করতে ও উহার পরিনতি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ভাষণটিতে ৫ম রুকু থেকে শেষ পর্যন্ত
এখানে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির রহস্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন ও কাফেরদের বিবেকের নিকট প্রশ্ন রেখেছেন? ঈমানের দাওয়াতকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে পেশ করেছেন। ঈমানিয়াতের বিষয়গুলোকে বিস্তারিত ও বুদ্ধিভিত্তিক ভাবে পেশ করা হয়েছে
আজকে আলোচ্য আয়াতটি ১ম ভাষণের মধ্যে রয়েছে।
০৬. তাফসীর:
وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُوْنَ
“ঞযবু ঢ়ষধহহবফ ধ ঢ়ষধহ ধহফ বি ঢ়ষধহহবফ ধ ঢ়ষধহ, যিরষব ঃযবু ঢ়বৎপবরাবফ হড়ঃ.”
“তার যখন নবী ও দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা করল আমিও তাদের ব্যাপারে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।” -সূরা নমল: ৫০
-তাদের ষড়যন্ত্রের সব কিছু আল্লাহ তায়ালার জানাছিল কিন্তু তাদের বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্ত কারো জানা ছিল না।
– এ مَكَرْ, চষধহ, চষড়ঃ, তথা গোপন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত যে পৃথিবীর আজ পর্যন্তের মানব জীবন দীর্ঘ ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। আফসোসের বিষয় হলো পৃথিবীর সকল যুগে সত্যের পতাকাবাহী ন্যায়ের ঝা-া বহনকারী, ইনসাফের দিকে আহবান কারীদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে জালেমদের সৃষ্টি এ গোফন ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের বিষাক্ত তীর। তাদের কঠিন চক্রান্ত থেকে কোন যুগের কোন নবী, রাসূল ও তাদের অনুসারীরা রেহাই পায়নি। আর সে ষড়যন্ত্র এত ভয়াবহ ছিল পাহাড় পর্বত যেন কঠিন প্রকম্পনে কেঁপে উঠেছিল। তাদের সে চক্রান্তের মূল লক্ষ্য ছিল খুন। হত্যা ও খুনের চাইতে ভয়াবহ আর কিছু হতে পারে না। কোরআন তাদের ষড়যন্ত্রের ভয়াবহতা একবাক্যের অংশের মধ্যে ‘ঠরারফষু’ উল্লেখ বলেন:
وَقَدْ مَكَرُوْا مَكْرَهُمْ وَعِنْدَ اللهِ مَكْرُهُمْ وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُوْلَ مِنْهُ الْجِبَالُ০
“তারা তাদের ষড়যন্ত্রের চাল প্রয়োগ করেছিল, আল্লাহর চাল তাদের চক্রান্তের তীর ব্যর্থ করে দিয়েছিল। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের এক একটি ষড়যন্ত্র এতই ভয়াবহ ছিল যে, উহাতে পর্বত ও পাহাড়গুলো যেন নড়ে উঠেছিল।”
-সূরা ইবরাহীম: ৪৬
তাদের ও তাদের গোয়েন্দাদের হত্যার নীল নকশা যে কত ভয়াবহ হতে পারে খোদার কালাম তার জীবন্ত সাক্ষ্য। এ দানবদের ধ্বংসের উল্লাস ও তাদের ধ্বংসের মারনাস্ত্র হাজার হাজার পৃথিবী সব কিছুকে যেন এক নিমিষে লাশের স্তুপ ও ভস্মিভূত ছাইয়ে পরিণত করতে পারে।
এত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও হতার পর হত্যার নীল নকশার এ ভয়াল বিশ্বে দ্বীনের দায়ীরা কিভাবে দাঁড়াবে? কিভাবে সংশোধন ও সংস্কারের ইলাহী কর্মকা- আনযাম দেবে? হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্র কারী নব্য ফিরআউন, নমরূদ, আবু লাহাব, হিটলার, বুশ, মোহন ও নেয়াহুর হাতে শুধু শতশত টন বোমা আছে তাই নয়। রয়েছে মিডিয়া এর মত জঘন্য আতংকের বিষয়। যা এক মুহূর্তে পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে পৌঁছে দিতে পারে মিথ্যা সংবাদের ভয়াবহ নাপাম বোমা। যা সত্যকে মিথ্যা, দিনকে রাত, রাতকে দিন, আকাশকে জমিন, জমিনকে আকাশ, জীবিতকে মৃত আর মৃতকে জীবিত, লুণ্ঠন, হত্যা ও অগ্নি সংযোগকারীদেরকে মানবতাবাদী আর নিজ দেশের আাদীর সংগ্রামকারীদের জঙ্গীবাদী আখ্যা দিয়ে শুধু প্রচার চালায় না বরং টিভি এর পর্দায় ও উপস্থাপন করে বানোয়াট, উদ্দেশ্যা প্রনোদিত ও অবিশ্বাষ্য সচিত্র প্রতিবেদন। যে ষড়যন্ত্রে মানব-দানব শুধু নয় পাহাড়-পর্বত, আকাশ-পৃথিবী পর্যন্ত কেঁপে উঠে থরথর করে। ন্যায়ের ঝা-া বাহীকে যারা খুন করার পরিকল্পনা এঁটেছে, দায়ী ইলাল্লাহদের লাশের উপর যারা পৈশাচিক উল্লাসে নৃত্য করছে, মা-বোনদের সতিত্ব নিয়ে যে সমস্ত ইতরেরা তামাশায় লিপ্ত রয়েছে। যাদের নির্মম গোলার আগুনে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাসগৃহ হাসপাতালের রোগীদের কে পুড়ছে এ সকল অমানবিক কর্মকা- অতীতে হয়েছে আজকে চলছে সামনেও এর ব্যাতিক্রম হবে না। এদের ব্যাপারে মহান প্রভুর চিরন্তন নীতি আখেরী কিতাবে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্তের জন্যে ঘোষনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন কালে কোন স্থানে এবং কারো জন্যে উহার চুল পরিমান ও পরিবর্তনের চিন্তা করার কোন অবকাশ নেই। চক্রান্তকারীদের ভয়াল ও পৃথিবী কাঁপানো ষড়যন্ত্রের নীল নকশা ব্যর্থ করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা নিলিপ্ত নন, উদাসীন হননি কোন কালে আর বিশ্ব স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রনকারীর জন্যে উহা শোভনীয় নয়। বরং ষড়যন্ত্রের বৈঠকে কারা হাজির ছিল, কে কি বক্তব্য রেখেছে, কারা অর্থের যোগান দিয়েছে, কারা মরনাস্ত্র সরবরাহকারী, কোন অমানুষেরা উহা বাস্তবায়ন করেছে ও কারা তাদের সামান্যতম সহযোগীতা করেছে এবং আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে এসব কিছু মহান মালিকের কুদরতী দৃষ্টির সামনে দিবালোকের মত স্পষ্ট। তাঁর নিখুত ও নির্ভূল জ্ঞানের উপর কোন অস্পষ্টতার বালি হাজির করা অসম্ভবের অসম্ভব। তাদের ভয়াল ষড়যন্ত্রের জবাবে আল্লাহতায়ালাও অব্যার্থ পরিকল্পনা স্থির করেন। উহা একেবারে নিখূঁত, যথার্থ, নির্মম ও মেয়াদী। যাদের চক্রান্ত নাকাম করার জন্য এ গজবের বোমা নির্ধারিত হয় উহার ভয়াবহতা, সময়সূচি ও ধ্বংসের বিস্তৃতি কোন কিছুই কারো জানার সুযোগ নেই। উহা থেকে আত্ম রক্ষার জন্যে পূর্বাভাষ জেনে বিপদ সংকেত ঘোষনা করা ও আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ঠাঁই নেয়ার চেষ্টা করার সুযোগ কোন জাতিকে অতীতে দেয়া হয়নি এবং সামনেও হবে না। কোরআন বলছে আল্লাহর ভয়াবহ ও নির্মম সিদ্ধান্ত রাতের আধারে ঘুমের ঘোরে অথবা ব্যস্ত অবস্থায় দিনের আলোতে আচানক এসেই যাবে।
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُوْنَ০
“লোকেরা কি নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমাদের আযাব সহসা রাতের আঁধারে আপন গৃহে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদেরকে পাকাড়াও করবেনা।” -সূরা আ’রাফ: ৯৭
أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُوْنَ০
“জনপদ মানুষগুলো আল্লাহর শান্তি সম্পর্কে কিভাবে নিশ্চিন্ত রইল যা হঠাৎ করে দিনের আলোতে খেলাধুলায় মত্ত থাকা অবস্থায় এসে যাবে।” -সূরা আ’রাফ: ৯৮
রর. তাফসীর:
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ
ুঝবব, ঃযবহ যিধঃ ঃযব বহফ ড়ভ ঃযবরৎ ঢ়ষধহ ড়ৎ ংবপৎবঃ ঢ়ষড়ঃ ধিং? খড়! ডব ফবংঃৎড়ুবফ ঃযবস ধহফ ঃযবরৎ ঢ়বড়ঢ়ষব, বাবৎুড়হব”
“দেখে নাও, তাদের লোমহর্ষক চক্রান্তের কি পরিণতি হয়েছে! আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের ও তাদের সমর্থনকারী জনপদের একজনকেও কঠিন শস্তির চাবুক থেকে রেহাই দেয় নি।” -সূরা নমল: ৫১
দ্বিতীয় আয়াতটি প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যা করছে যেন।
তাফসীরবিদগণ বলেছেন যে হযরত সালেহ (আঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী সামুদ জাতির বারজন দলপতি পাহাড়ের গুহায় বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। সেখান থেকে উঠে আসার সুযোগ তাদের কে দেয়া হয়নি। আল্লাহর হুকুমে পাহাড় তাদেরকে সেখানে চেপে ধরেছিল। সেখান থেকে উঠে আসার সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আল্লাহ তায়ালাকে কোন সময় সুযোগ এর অপেক্ষা করা, উপায় উপকরণের সংগ্রহ করার কোন প্রয়োজন হয় না। তিনি যখন যে মুহূর্তে যে সিদ্ধান্ত যেভাবে বাস্তবায়ন করতে চান উহা ঠিক সেভাবেই নিমিষে বাস্তবায়িত হয়ে যায়। কোরআন বলছে-
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ০
“আল্লাহ তায়ালা যখন কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চান তিনি শুধু বলেন, হয়ে যাও, আর অমনি উহা হয়ে যায়।” -সূরা ইয়াসীন: ৮২
মানব ইতিহাসের প্রতিটি যুগে দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত তাগুতি শক্তিরা নিক্ষেপ করেছে ষড়যন্ত্রের বিষাক্ত তীর, পাঠিয়েছে মরণের ভয়াল চিঠি, বিস্পোরিত করেছে অত্যাচারের বোমা। উহাতে দায়ীদের জীবনে পরীক্ষার তীব্রতা বেড়েছে, বেড়েছে যাতনার কাল রাত কিন্তু তাদেরকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। এরা জীবন্ত দলীলগুলো কোরানে পাকের পাতায় পাতায় রয়েছে অংকিত। এ ক্ষুদ্র পরিসরে এত বিস্তৃত বিষয় আলোচনার অবকাশ নেই। এখানে শুধু সামুদ জাতিদের দুষ্ঠ ও দূরাচার “কাদ্দার ইবনে সলফ” নবীর সাথে আল্লাহর কুদরাতের উটনী হত্যা ও খোদার গজব বিষয়ে বলতে চাই-
فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ نَاقَةَ اللهِ وَسُقْيَاهَا ০ فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوْهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا ০ وَلاَ يَخَافُ عُقْبَاهَا০
“আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাদেরকে বললেন, সাবধান! আল্লাহর উটনীকে পানি পান করা থেকে বাধা দেবে না। সামুদ জাতিরা নবীকে অমান্য করল হত্যা করল মহান প্রভুর কুদরাতের উটনীকে। আর তাদের এ বাড়াবাড়ির ফলে আল্লাহর গজব তাদেরকে পাকাড়াও করল একজনকেও জীবিত রাখা হয়নি গোটা জাতির সবাইকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহকে পরিনতির ভয় করার প্রয়োজন নেই।” -সূরা আস্ সামস: ১৩-১৫
কোন ষড়যন্ত্রকারী, হত্যার পরিকল্পনাকারী, দাওয়াতে বিরোধীতাকারীকে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি ছাড়া কবরে যেতে দেননি। এক এক জাতির জন্যে তাদের পাপাচার অনুসারে নির্ধারিত ছিল শাস্তির প্যাকেজ। সালেহ (আঃ) সতর্কবাণী অমান্যকারী ও উটনী হত্যাকারীদের উপর আল্লাহর আযাব ছিল অতি দ্রুত ও ক্ষমাহীনভাবে।
فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ ০ إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ صَيْحَةً وَاحِدَةً فَكَانُوْا كَهَشِيْمِ الْمُحْتَظِرِ০
“দেখলেত সালেহ (আঃ) জাতির জন্যে আমার সাবধান ও আযাব কি নির্মম ছিল?  আমরা তাদের জন্যে কর্ণপটই চিহ্নকারী এক ভয়ংকর আওয়াজ পাঠালাম যা তাদেরকে লাশ বানিয়ে এভাবে রেখেছিল যেন গামলায় পানিতে ডুবিয়ে রাখা খড়বিছালী।” -সূরা ক্বামার: ৩০-৩১
-আল্লাহ তায়ালা বান্দাহদের উপর গজব দিতে চান না। অনাচারী জাতিগণ আল্লাহর গজবকে আহবান করেছে। বান্দাগণ আল্লাহ তায়ালার এতই প্রিয় যে, তাদের হিদায়তের বিষয় এতই গুরুত্বপূর্ণ যে শতশত পয়গম্বরকে খুন করার পরও আল্লাহ তায়ালা আবার নবী প্রেরণ করেছেন মানুষেরা যেন আবার সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারে।
ররর. তাফসীর
فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
“ঞযড়ংব ধৎব ঃযবরৎ যড়ঁংবং ভধষষবহ ফড়হি নবপধঁংব ঃযবু বিৎব ৎিড়হম ফড়বৎং. খড়! ঃযবৎবরহ রহফববফ ধ ষবংংড়হ ভড়ৎ ধ ঢ়বড়ঢ়ষব যিড় যধাব যধাব শহড়ষিবফমব.”
“তাদের বাড়ীঘর, সম্পদ ও ব্যবহার্য সবকিছুর ধ্বংসাবশেষ মুখ ধুবড়ে রয়েছে বিরান জমিনে; জুলুমের কারণে তাদের উপর নেমে এসেছে আল্লাহর গজব। জ্ঞানীদের জন্যে এর মধ্যে রয়েছে অনন্ত শিক্ষার উৎস।” -সূরা নফল: ৫২
অপরাধী জাতিগণ তাদের অঢেল সম্পদ, সীমাহীন প্রাচুর্য, আরাম-আয়েশ, শীতাতপ বিলাস ভবন, অগনিত সোনা চাঁদির স্তুপ, অসংখ্য বাহিনী ও হাজার মারনাস্ত্র সজ্জিত হয়ে দাম্ভিক জীবন যাপন করছিল সীমাহীন পাপাচারে। মনে করেছিল জীবন এভাবে কেটে যাবে যুগযুগ ধরে। নিরন্ন মানুষের হাহাকারে শীতার্ত মানুষের কম্পন, আর্তমানবতার চিৎকার, খোলা আকাশের নীল চাঁদোয়ার নিচে কংকাল সার বনি আদমের দুর্বহ নিশিযাপন এদের হৃদয়ে কোন অনুভূতি জাগায়নি। বঞ্চিত ও মজলুমেরা এতটুকু অধিকার ও ইনসাফের ব্যর্থ আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের আদালতের কিলান ধরে, মজলুমদের চোখের পানিতে সিক্ত হয়েছিল শুস্ক মাটি সিক্ত হয়নি তাদের পাশান হৃদয়। এর চেয়েও ভয়াবহ ছিল তাদের নিকট আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে লাখো পয়াগাম্বর হাজির হয়েছে অহীর দাওয়াত নিয়ে। দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তারা ক্ষান্ত হয়নি বরং দায়ীদরেকে পাথরের আঘাতে জর্জরিত করেছে, উত্তপ্ত লাল কয়লার উপর শুইয়ে রেখেছে জীবিত মানুষ। আল্লাহ তায়ালা আফসোস করে বলেন-
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِنْ رَسُوْلٍ إِلاَّ كَانُوْا بِهِ يَسْتَهْزِئُوْنَ০
“আফসোস আমার বান্দাদের জন্যে! তাদের নিকট এমন একজন রাসূল ও আসলনা যাতে তারা ঠাট্টা, বিদ্রোপ, অপমান ও নির্যাতন করেনি।”
-সূরা ইয়াসীন: ৩০
সকল যুগে জালেমদের উত্তরসূরীরা নবীদের উত্তরসূরীদের সাথে ইনসাফের আচরণ তথা মানবিক আচরণ করেনি। তাদের জুলম, অত্যাচার, সত্যকে প্রত্যাখান ও দায়ীদের উপর অমানবিক আচরনে সংযত না হওয়া ও অনুতপ্ত না হওয়া বরং আরও পাপাচার ও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হওয়া আল্লাহর শাস্তিকে তাদের জন্য ওয়াজিব করেছে। আর শাস্তির চাবুক যখন আঘাত হেনেছে তখন জালেমদের সম্পদ, প্রাচুর্য, ক্ষমতা, জনবল ও অস্ত্রবল আল্লাহর মারের কাছে কোন কাজে আসেনি।
গজবের বোমা যখন বিস্পোরিত হয়েছে তখন অপরাধিদের সকলের উপর উহা সমান ভাবে কার্যকর হয়েছে।
পাপাচারে লিপ্ত, সত্য প্রত্যাখ্যান ও আল্লাহর পথে আহবানকারীদের জীবন নিয়ে যারা যখনই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আল্লাহর শাস্তি এদের সাথে কোন সময় আপোষ করে নি। যথাসময়ে ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদদ দান কারী একনকি তাদের প্রজন্ম শুদ্ধ জমিনের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আজও তাদের বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট, ব্যবহৃত তৈজসপত্র, তাদের সভ্যতার চিহ্ন বহনকারী সবকিছু মাটির নিচে আল্লাহ তায়ালার গজবের ভয়াবহতার জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার বছরে ধরে। লোকেরা এগুলোকে বলছে মহেঞ্জোদারো ও হরফ্ফার সভ্যতা বলে। তারা জানে না এদের অধিবাসীরা সভ্য ছিল না কারণ ইট-পাটকেলও পাথরের নাম সভ্যতা নয় বরং উহা মানুষের আচরনের নাম। সভ্য আচরণের অধীকারিদের উপর গজবকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। কোরআন বলছে গজব ও শাস্তি জালিমদের জন্যে অবারিত-
فَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوْشِهَا وَبِئْرٍ مُعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَشْيِدٍ০
“কত জনপদকে গজব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছি যাদের অধিবাসীরা ছিল জালেম ও সীমা লংঘন কারী, তাদের হাম্মাম খানা ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে।” -সূরা হজ্জ: ৪৫
রা. তাফসীর
إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
ুঞযবৎব রং ষবংংড়হ ড়ৎ ংরমহ রহ ঃযবংব ফবংঃৎঁপঃরড়হ ভড়ৎ ধ ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ শহড়ষিবফমব”.
“এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনন্ত শিক্ষার উৎস।” “আয়াত” শব্দটি কোরানে খুব তাৎপর্যপূর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
কোরানের ‘আয়াত’ কে আয়াত বলা হয় কারণ এটা আল্লাহ তায়ালার কালাম হওয়ার করনে প্রভুর পরিচয় লাভের সবচেয়ে বড় নিদর্শন। আবার সৃস্টির প্রতিটি অনু-পরমানু এক কথায় জমিন-আকাশ, গ্রহ-তারা, গাছ-পালা, পশু-পাখি সবকিছু আয়াত কারণ উহারা তাদের স্রষ্টার ক্ষমতা ও যোগ্যতার নিদর্শন বহন করছে অতীত জাতি সমূহের বাড়ী ঘর সমূহের ধ্বংসাশেষ এর প্রতিটি ইট পৃথিবীর পরবর্তী মানব সম্প্রদায়ের জন্যে এক একটি বিশ্ব কোষের বালাম। প্রতœতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক ও গবেষকদের জণে এর মধ্যে রয়েছে অনেক অজানা তথ্য ও তত্ব। কি কারণে একটি জাতির বিকাশ ও উন্নয়ন হয় আবার কি অপরাধ ও সীমালংঘনের কারণে সভ্যতার সমস্ত উপায় উপকরণ সহ চূড়ান্ত ধ্বংসের মুখামুখী হতে হয়।
ইত্যাদি জ্ঞান লাভ করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা গজব প্রাপ্ত অতীত জাতির হাজার ধ্বংসাবশেষ রেখে দিয়েছেন হাজার হাজার বছর ধরে উম্মতে মুহাম্মদ (সঃ) কে আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যাও পৃথিবী বিচরন করে সে সমস্ত জাতির চোখ ধাঁধানো বস্তুগত উন্নতির রেখে যাওয়া উপকরণকে প্রত্যক্ষ কর, তাদের সাথে কথা বল, তারাই বলে দেবে এই জাতিরা কি কি ভয়ংকর গুনাহে লিপ্ত হয়েছিল আর সাবধান বাণী উচ্চারণকারী নবীদেরকে ও তাদের সাথীদের কি নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। ইতিহাস বলছে একদিনের মধ্যে প্রায় ৪৩ জন পর্যন্ত নবী হত্যা করার ঘটনা বনী ইসরাঈলের মানুষেরা এ পৃথিবীতে সংগঠিত করেছে। তাদের বাড়াবাড়ি ও অপরাধের তা-ব কি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে আল্লাহ তায়ালা ঐ দূরাচারী জাতির মাটি সহ উপরে তুলে তারপর উল্টে দিয়েছিল। কোরআন বলছে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি জুলুম করেনি বরং তাদের গজবে ইলাহীকে আহবান করেছে-
أَوَلَمْ يَسِيْرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَانُوْا أَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَأَثَارُوْا الْأَرْضَ وَعَمَرُوْهَا أَكْثَرَ مِمَّا عَمَرُوْهَا وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانَ اللهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلٰكِنْ كَانُوْا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ০
“তারাকি জমিনে বিচরণ করে দেখেনা তাদের পূর্বে জাতি সমূহের পাপাচারের কি ভয়াবহ পরিনতি হয়েছিল? তারা তোমাদের চেয়ে অনেক শক্তির অধিকারী ছিল, অনেক বেশি কর্ষণ করেছিল মাটিকে, অনেক বির্নিমান করেছিল মাটির উপর যা তোমরা করতে পারনি। এদের নিকট সুস্পষ্ট দলীলসহ নবীগণ এসেছিলেন আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেনি বরং সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তারাই আল্লাহর গজবকে আহবান করেছিল জুলুম করেছিল নিজেদের উপর।”
-সূরা রূম: ০৯
পৃথিবীর মানুষের জন্যে আর একটি পরিতাপের বিষয় এইযে, খুব কম সংখ্যক মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা হাসিল করে। অধিক সংখ্যক মানুষের অবস্থা এইযে, তাদের চোখ আছে কিন্তু তারা দৃষ্টি প্রতিবন্দী, তাদের কান আছে কিন্তু তারা শ্রবণ প্রতিবন্দী, তাদের হৃদয় ভাবনার শক্তি লোপ পেয়েছে। কোরআন এ ধরনের অন্ধ ও বধির ও অনুভতিহীনদেরকে চতুস্পদ নামে অভিহিত করেছে।
দুনিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসীদের অন্যতম মিশরের এক সময়ের রাজা ফিরাউন দ্বিতীয় রেমসীস। যার নির্দেশে শতশত মায়ের বুক খালি করে ছেলে সন্তান হত্যা করা হয়েছিল, আল্লাহর নবী মূসা (আঃ) কে সে অস্বীকার শুধু করেনি বরং নবীর গায়ে হাত তুলেছিল, দেশ থেকে নবীও তার সাথীদের হাঁকিয়ে বের করে দিয়েছিল তার অস্ত্রধারী সৈন্যবাহিনী, অহংকার তাকে এ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে আল্লাহ তায়ালার রবুবিয়াত শুধু অমান্য করে ক্ষান্ত হয়নি বরং নিজেই “রাব্বুকুমুল আলা” তোমাদের শ্রেষ্ঠ রব বলে ঘোষনা দেয়ার দুঃসাহস করেছিল। লোহিত দরিয়ায় মৃত্যুর সময় ঈমান আনার ঘোষনা দিলেও আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন যে সাকরাতুল মওতের সময় ঈমান আনার সুযোগ নেই তবে তোমার লাশকে পঁচন থেকে বাঁচিয়ে রাখা হবে একটি জ্বলন্ত আয়াত হিসেবে, যাতে মানুষেরা শিক্ষা নিতে পারে।
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيْكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ اٰيَةً وَإِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ اٰيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ০
“আজ আমরা তোমার লাশ ধ্বংস হতে দেব না, যাতে পরবর্তী মানব জাতির নিদর্শন করে রেখে দেব। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন।” -সূরা ইউনুস: ৯২
মিশরের হাজারো পর্যটকের ঢল নামে মমিতে রাখা ফিরাউনের সংরক্ষিত লাশ দেখার জন্য। কিন্তু উহা দেখে শিক্ষা গ্রহন করে খুব কম লোকে। মানুষের ভাবে এত হাজার বছরে ধরে কি করে একে রাখা হল। লাশে কোন পঁচন এলোনা? এ কথা ভাবেনা যে এর লাশ পচন থেকে রক্ষা পেয়েছে আল্লাহর বিশেষ হুকুমে। একজন বিশ্ববিখ্যাত তাগুতকে আয়াত বানিয়ে আল্লাহ রেখে দিয়েছেন হাজার হাজার বছর ধরে মানুষেরা যেন উহা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে। সীমা লংঘনের পথ ছেড়ে আনুগত্যের পথে চলার শপথ গ্রহণ করে।
০৬. শিক্ষণীয় বিষয়:
ক.    একটি ঐতিহাসিক সত্য যে সকল যুগে দ্বীনের পথে আহবান কারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে।
খ.    সত্যের পক্ষ্যে অবস্থানকারীদের পক্ষে অবস্থান রয়েছে মহান প্রভুর।
গ.    জালেমদের পরিকল্পনার সব কিছু আল্লাহ জানেন কিন্তু তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত কেউ জানে না।
ঘ.    একটি পর্যায়ে আল্লাহর সিদ্ধান্ত যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে আর ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের সব কিছুকে ধ্বংস ও লাশের স্তুপে পরিনত করা হয়েছে।
ঙ.    ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে সকলের জন্যে রয়েছে শিক্ষা- “পাপাচার ও অহংকার” আল্লাহর গজবকে অনিবার্য করে।
চ.    কোন বস্তুগত উন্নতি ও কৌশল দিয়ে গজব ঠেকানো যাবে না- ‘ঈমান ও চরিত্র হচ্ছে প্রতিরক্ষা ব্যুহ
০৭. শেষ কথা:
কোরআন এসেছে পথচলার চিরন্তন আলো নিয়ে। ইহা ছাড়া কারো নিকট কোন আলো নেই। আজকের জাতিয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্য করছি গোটা বিশ্বের প্রতিটি জনপদ আগ্রাসী শক্তি ও তাদের অনুচরদের কঠিন ষড়যন্ত্রের যাঁতাকালে বন্দি। সত্যের সৈনিকদের বিরুদ্ধে চলছে কঠিন হত্যার পরিকল্পনা। এটি কোন নতুন বিষয় নয় সকল যুগেই এমনি হয়েছিল। কোরানে পাকের এ আলোচনার প্রেক্ষিতে দ্বীনের দায়ীদের ঈমান, চরিত্র, সাহস ও যোগ্যতা দিয়ে শত্রুর ষড়যন্ত্র বুঝতে হবে ও নিরাশ না হয়ে মোকাবিলার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে ধৈর্যের সাথে। আল্লাহ তায়ালার নিক্ষিপ্ত চাল পরাশক্তির সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের জাল শুধু চিহ্ন করবে না বরং তাদেরকেও মিশিয়ে দেবে মাটির সাথে।
এটি কারো কাছে অজানা নয় পৃথিবী আজ ষড়যন্ত্রের জালের মধ্যে। সি.আই.্. কেজিবি মোশাদ’র এর মত সংগঠন গুলোর জন্ম দেয়া হয়েছে ষড়যন্ত্রের ঘবঃড়িৎশ পৃথিবীকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে এদের বিভিষিকা পূর্ণ কার্যক্রম পৃথিবীর মানুষ ও সবকিছুকে ভয়াল আতংকে নিক্ষেপ করেছে। পৃথিবীর মানব গোষ্ঠির এত লাখ বছরের আয়োজন, বর্নিল ও দৃষ্টি নন্দন সভ্যতার উপকরণ সবকিছু তাদের হিংস্র থাবায় ঘিরে রেখেছে।
তাদের কার্যক্রম যে কেত জঘন্য যা দেখে শয়তানও যেন ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। এদের ষড়যন্ত্রের শিকারে হাজাহাজার মানুষের জীবন বলি হচ্ছে, শত শত দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হচ্ছে। হাজার জনপদ লেলিহান আগুনে পুড়ছে। কোটা কোটি ডলার অডিট বিহীন খরচের বাজেট রয়েছে তাদের জন্যে। অথচ অগনিত বনি আদম অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে এদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কত দেশের কত রাষ্ট্রনায়ক, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস দীর্ঘ ও বিভীষিকাপূর্ণ। তাদের বিষয়ে খোদায়ী পরিকল্পনা শুধু তাদের সব কিছুকে উলট-পালট করে দিতে পারে। নবীরা পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এদের চক্রান্ত নস্যাৎ করতে সমর্থ্য ছিলেন না। মুমিনদেরকে ঘাবড়ে গেলে চলবে না আল্লাহকে কেউ মুকাবিলা করতে পারবে না, তিনি মহা পরাক্রমশালী, তিনি কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুধু বলেন كُنْ আর সাথে মাসে উহা বাস্তবায়ন فَيَكُوْنُ কোরআন বলছে।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَّقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ০
“আল্লাহ তায়ালা কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যখন ইচ্ছা করেন তখন তিনি শুধু বলেন ‘হও’ আর উহা সাথে সাথে হয়ে যায়।” -সূরা ইয়াসীন: ৮২
মুমিনদেরকে সকল সময় ও সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও তাওয়াক্কুল করতে হবে। যারা আল্লাহ্র উপর ভরসা করে তিনি তাদের জন্যে যথেষ্ট।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী  চিন্তাবিদ

Popular Posts