Showing posts with label সংশোধনমূলক পোষ্ট. Show all posts
Showing posts with label সংশোধনমূলক পোষ্ট. Show all posts

Thursday, September 13, 2018

ইসলামী আন্দোলনে কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং তার পরিণতি

- মুহা: আল আমিন ওমর
ইসলামী আন্দোলন
সাধারনত আন্দোলন বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে নড়া-চড়া করা, দোল খাওয়া বা অবস্থান পরিবর্তন করা ইত্যাদি। এ শব্দটির আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে আল-হারকাত এবং ইংরেজিতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে গড়াবসবহঃ। আল কুরআনের নিজস্ব পরিভাষায় এ শব্দটি হচ্ছে আল-জিহাদু ফি সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর জমিনে তার দীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ইসলাম বিরোধী সকল প্রকার প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে নিজের জান, মাল, বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং শক্তি সামর্থ্য উৎসর্গ করে সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত সংগ্রাম করার নামই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বা ইসলামী আন্দোলন।

ইসলামী আন্দোলন ঈমানের অপরিহার্য দাবি
মহান আল্লাহ আল কুরআনের সূরা আস-সফের ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে ঈমানদারদের লক্ষ্য করে বলেন, “হে ঈমানদারগ! আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসার কথা বলব না, যা তোমাদেরকে (আখিরাতের) ভয়াবহ শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে? আর তা হচ্ছে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের জান-মাল কুরবান করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে পার।”
সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন, “তোমরা কি মনে করেছো যে, এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে? অথচ আল্লাহ কি দেখে নিবেন না কে আল্লাহর দীন বিজয়ের জন্য চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং বিপদ মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করেছে?”
রাসূলে কারীম (সা) ইসলামী আন্দোলনের কাজকে সর্বোত্তম কাজ হিসেবে অবিহিত করেছেন। হযরত আবু যার গিফারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, কোন্ কাজটি সবচেয়ে উত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সর্বোত্তম আমল কোন্টি? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা), তারপর কোন্টি সর্বোত্তম আমল? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা), তারপর কোন্টি সর্বোত্তম (কাজ) আমল? তিনি বললেন, মকবুল হজ বা গৃহীত হজ। [সহীহ বুখারী ১ম খণ্ড]

ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালার
পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম মানব হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এসেছেন তাঁরা সবাই ছিলেন এ আন্দোলনের প্রধান সিপাহসালার। আর এ সমস্ত নবী-রাসূলদের পাশাপাশি যাঁরা তাঁদের তাওহীদের সুমহান দাওয়াত কবুল করেছিলেন তাঁরাও এ আন্দোলনের অন্যতম শরিকদার। তাওরাত, যাবুর, ইনজিল এবং সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআনে যার সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা আল কুরআনের সূরা আন-নাহলের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেন, “প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি। যিনি এই বলে তাদের আহব্বান জানিয়েছিলেন- তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর এবং তাগুতের আনুগত্য পরিহার কর। এরপর তাদের মধ্য হতে কাউকে হেদায়াত দান করা হয়েছে আর কারোর ওপর গোমরাহী চেপে বসেছে। সুতরাং তোমরা জমিনে পরিভ্রমণ কর আর দেখ মিথ্যাবাদীদের পরিণাম কী হয়েছিল।”
সূরা মায়িদার ৫৭ নম্ব আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন, “হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দিন। আর যদি তা না করেন, তবে তো আপনি তাঁর পয়গামের কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের সৎপথে পরিচালিত করেন না।”
যেহেতু, সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী মুহাম্মদ (সা)-এর ওফাতের পর কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না, সেহেতু যারা প্রকৃত মুমিন তারাই কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে একটি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অদ্যাবধি লড়াই করে আসছেন এবং এ লড়াই কিয়ামত সংঘঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয়তার ফলাফল
ইসলামী আন্দোলনে সর্বসময়ে সক্রিয় থাকা আন্দোলনের কর্মীদের একটি প্রধান গুণ বা বৈশিষ্ট্য। বিপদ মুসিবত যত বড়ই হোক না কেন তাদের থাকতে হবে দৃঢ় ঈমান, অনঢ় ও অটল মনোবল।
এক্ষেত্রে রাসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরামগণসহ যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মহৎ ব্যক্তিরাই হচ্ছেন আমাদের প্রধান মাইল ফলক। ইসলামবিরোধী শক্তির নির্যাতন নিপীড়নে তারা ছিলেন সীসাঢালা প্রচীরের ন্যায় অবিচল। নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা যতই বেড়েছে তাদের ঈমান ততোই বৃদ্ধি পেয়েছে। নিস্ক্রিয়তার লেশ মাত্র তাদের আঁচ করতে পারেনি। প্রয়োজনে তারা দেশান্তরিত হয়েছেন কিন্তু তাগুতি শক্তির কাছে বিন্দুমাত্র আপস করেননি। বিপদ-মুসিবতে সর্বসময়ে যারা ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় থাকেন আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন বলে কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
আল কুরআনে সূরা আস-সফের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আল্লাহ তা’য়ালা ঐ সমস্ত লোকদের ভালোবাসেন যারা সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে।”
সূরা বাকারার ২১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কি মনে করে নিয়েছ যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখন পর্যন্ত তোমাদের ওপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় বিপদ-আপদ অবতীর্ণ হয়নি। তাঁদের ওপর বহু কষ্ট ও কঠোরতা এবং কঠিন বিপদ মুসিবত অবতীর্ণ হয়েছিল। এমনকি তাঁদেরকে অত্যাচার নির্যাতনে জর্জরিত করে দেয়া হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত তদানীন্তন রাসূল এবং তাঁর সঙ্গীগণ আর্তনাদ করে বলেছিলেন, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তখন তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”
রাসূলে করীম (সা) বলেছেন, “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল করীম (সা) বলেছেন, আল্লাহর পথে একটা সকাল ও একটা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও এর সমস্ত সম্পদ থেকে উত্তম।” [সহীহ বুখারী]
হযরত মু’য়াজ ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি উটের দুধ দোহনের সম-পরিমাণ সময় আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। (তিরমিযী)

ইসলামী আন্দোলনে যারা নিস্ক্রিয়
সুযোগবাদী স্বার্থান্বেষী ও মুনাফিকরাই ইসলামী আন্দোলনে এসে নিস্ক্রিয় থাকে। সুযোগ বুঝে এ আন্দোলন থেকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে এবং অনেক সময়ে এ আন্দোলনের ক্ষতি করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। বিশ্বনবী (সা)-এর সময়ে আব্দুল্লাহ বিন উবাইসহ কিছু সুযোগবাদী, স্বার্থান্বেষী মুনাফিক ছিল, লোক দেখানো এবং স্বার্থ হাসিল করার জন্যই তারা মূলত এ আন্দোলনে শরিক হয়েছিল।
এইসব মুনাফিকদের সম্পর্কে সূরা নিসার ১৪২-১৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোকাবাজি করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাদেরকে ধোকার প্রতিফলন প্রদান করবেন। তারা যখন নামাজের জন্য দাঁড়ায় তখন অনিচ্ছা ও শৈথিল্য সহকারে শুধু লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে। তারা কুফরি ও ঈমানের মাঝখানে দোদুল্যমান হয়ে রয়েছে, না পূর্ণভাবে এদিকে না পূর্ণভাবে ওদিকে। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার মুক্তির জন্য আপনি কোনো পথ পাবেন না।”

ইসলামী আন্দোলনে নিস্ক্রয়তার পরিণতি
যেহেতু নামাজ-রোজার মত ইসলামী আন্দোলনও ফরজ, সেহেতু মুমিন জীবনে ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অসীম। এ আন্দোলনে যারা নিস্ক্রিয় থাকে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা সূরা বাকারার ২১৭-২১৮ নম্বর আয়াতে বলেন, “তোমদের মধ্যে যারা নিজেদের দীন থেকে এড়িয়ে চলবে এবং অস্বীকারকারী (কাফির) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। এ সমস্ত লোকেরাই হবে জাহান্নামী, এতে তারা চিরকাল থাকবে। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে, তারাই তো মহান রবের রহমতের প্রত্যাশী, যিনি ক্ষমাকারী ও পরম করুণাময়।”
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১৩৭-১৩৮ নম্বর আয়াতে আরো বলেন, “যারা একবার পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে পুনরায় কুফরির পথ অবলম্বন করে এবং দিন দিন এ কুফরিতেই তারা উন্নতি লাভ করে আল্লাহ এ সমস্ত লোকদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং পথও দেখাবেন না। আর যারা প্রতারনা করে তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন যে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ বেদনাদায়ক আজাব এবং যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারীদের পরিত্যাগ করে যারা কুফরি করে তাদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয়। আর তাদের কাছেই সম্মান প্রত্যাশা করে অথচ যাবতীয় সম্মান তো শুধু আল্লাহরই জন্য।”
আল্লাহ তায়ালা সূরা তাওবার ৩৮-৩৯ নম্বর আয়াত আরো বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো? যখন তোমাদেরকে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে বলা হয়, তখন তোমরা বিভিন্ন ধরনের বাহানাবাজি তালাশ করার মাধ্যমে (আমাদের দ্বারা সম্ভব নয় বলে) জমিনকে আকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের বিভিন্ন উপকরণ তো খুবই নগন্য। যদি তোমরা (আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার কাজে) বের না হও তাহলে তিনি তোমাদেরকে বেদনাদায়ক কঠিন আজাব দিবেন। আর তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।”
রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, হযরত হারেসুল আশয়ারী (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেনÑ ১. সংঘবদ্ধ হবে; ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে; ৩. তার আদেশ মেনে চলবে; ৪. হিজরত করবে অথবা আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে; ৫. আর আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাবে।
আর যে ব্যক্তি (আল্লাহর দ্বীন কায়েমের) সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে গেল সে যেন ইসলামের রশি তার গলা থেকে খুলে ফেলল, যতক্ষণ না সে (আল্লাহর দীন কায়েমের) সংগঠনে ফিরে আসে।
আর যে ব্যক্তি লোকদেরকে জাহেলিয়াতের দিকে আহ্Ÿান করে নিশ্চয়ই সে জাহান্নামী, যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে। (তিরমিযী)

নিস্ক্রিয় থাকা মুমিনের কাম্য নয়
যেহেতু (১) দাওয়াত ইলাল্লাহ, (২) শাহাদাতে আ’লান্নাস, (৩) কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ, (৪) ইক্বামতে দীন, (৫) আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহি আ’নিল মুনকার- এই পাঁচটি কাজের  সমন্বয়ের নামই ইসলামী আন্দোলন। সেহেতু আল্লাহ তা’য়ালার প্রকৃত কোনো মুমিন এই পাঁচটি কাজের কোনো একটি কাজ থেকে নিজেকে গাফিল রাখতে চায় না।
সূরা হজের ৭৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর (প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাও) যেমন জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে নিজের কাজের জন্যই বাছাই করে রেখেছেন। আর দীনের ব্যাপারে কোনো সঙ্কীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। আর তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম।”
সূরা নিসার ৭৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করবে না, অথচ অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলছে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এ জনপদের জালিম অধিবাসীদের নিকট হতে বের করে নাও। আর আমাদের জন্য তোমার নিকট হতে একজন পৃষ্ঠপোষক অধিপতি নিয়োগ কর এবং তোমার নিকট হতে একজন সাহায্যকারী পাঠাও।”

Thursday, September 6, 2018

ঈমানী দুর্বলতা কাটানোর ১০ উপায়

- মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা! ঈমানী দুর্বলতার একটি লক্ষণ হলো গুনাহ ও হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া। এর প্রতিকার হিসেবে আমরা আপনাকে দশটি পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি, আমাদের পরামর্শ গুরুত্বসহ গ্রহণ করবেন এবং এক্ষেত্রে গড়িমসি ও অলসতা পরিহার করবেন। মনে রাখবেন, ঈমান হলো বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। তাই ঈমানী দুর্বলতা কাটাতে নিজ গরজেই এগোতে হবে। অন্য কেউ মুখে তুলে খাইয়ে দিবে না।
এক. আমরা আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا
আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)
দুই. অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, নবী  ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের অন্তরকে প্রশান্ত করার জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে নবীদের কাহিনীগুলো উল্লেখ করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ
অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন…। (সূরা বাকারা ১৩)
এর তাফসিরে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলেন,  صدِّقوا كما صدَّق أصحاب محمد   মুহাম্মদ ﷺ -এর সাহাবারা যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আন…। (তাফসিরে তাবারী, সংশ্লিষ্ট আয়াত)
তিন. অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)
চারইসলামের সৌন্দর্য সৌহার্দ্য ও সম্প্র্রীতি সম্পর্কে জানুন। কেননা, সলামের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য যুগে যুগে মানুষকে মুগ্ধ করেছে এবং ঈমানের প্রতি ধাবিত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। (সূরা হুজুরাত ৭)
পাঁচ. প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। আকাশে মেঘ দেখলে আরবরা খুশি হতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহﷺ -এর চেহারা মলিন হয়ে যেতো আযাবের ভয়ে। কারণ সামূদ জাতি আযাব বহনকারী মেঘ দেখে রহমতের বৃষ্টি ভেবে ফূর্তিতে মেতে ছিলো। (মুসলিম, ৮৯৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। (সূরা আলি ইমরান ১৯০)
ছয়আল্লাহ ও তাঁর রাসুল -কে সবচেয়ে বেশি মহব্বত করুন এবং তাঁদের হুকুমগুলোকে সব কিছুর চাইতে বেশি প্রাধান্য দিন। আনাস ইবন মালিক রাযি. বলেন, রাসূল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ مَنْ أَحَبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ كَانَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَمَنْ كَانَ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ
যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে; ১. যে কাউকে ভালবাসলে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাকে ভালবাসবে; ২. আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসূল তার কাছে অন্য সবকিছুর চাইতে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ্ তাকে কুফর হতে পরিত্রাণ করার পর পুনঃ কুফরীতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট পছন্দনীয় হবে। (বুখারী ৪৯৮৭)
সাতআখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
 إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّىٰ إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে যমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি যমীন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠলো আর যমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তুপাকার করে দিল যেন কাল ও এখানে কোন আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি নিদর্শণসমূহ সে সমস্ত লোকদের জন্য যারা লক্ষ্য করে। (সূরা ইউনুস ২৪)
আটআল-ওয়ালা ওয়াল-বারা ঠিক রাখুন। অর্থাৎ বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই আল্লাহর জন্য। সুতরাং মুমিনদের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখুন। আর কাফিরদের সাথে শত্রুতা রাখুন ও সম্পর্কচ্ছেদ করুন। কেননা, দ্বীনের শত্রুদের সাথে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
নিঃসন্দেহ তোমাদের বন্ধু হচ্ছেন কেবলমাত্র আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল, আর যারা ঈমান এনেছে, আর যারা নামায কায়েম করে, আর যাকাত আদায় করে, আর তারা রুকুকারী। (সূরা মায়িদা ৫৫)
রাসূল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
مَن أحبَّ للَّهِ وأبغضَ للَّهِ ، وأعطى للَّهِ ومنعَ للَّهِ فقدِ استَكْملَ الإيمانَ
যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে। (আবু দাউদ ৪৬৮১)
নয়ঈমানী দুর্বলতার চিকিৎসায় বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এটি আল্লাহভীতির সূচক। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। সাধ্য থাকার পরও অহংকার ও নির্লজ্জতার পোশাক না পরলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে ঈমানের পোশাক পরাবেন বলে তিরমিযির একটি হাদীসে এসেছে। 
দশ. সর্বোপরি আপনাকে বিভিন্ন রকমের নেক আমল করা এবং গুনাহ বর্জনের পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, যেকোনো নেক আমল ঈমানকে বৃদ্ধি করে। এজন্য কোরআন মজিদে যত জায়গায় ঈমানের কথা এসেছে তত জায়গায় পাশাপাশি নেক আমল করার কথাও এসেছে।
পরিশেষে দোয়া করি, হে আল্লাহ! আপনি ঈমানকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন এবং ঈমানকে আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফর, পাপাচার ও আপনার অবাধ্যতাকে আমাদের নিকট অপছন্দনীয় করে দিন এবং আমাদেরকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।

Popular Posts